ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড পাওয়ার উপায়



ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড সকল ফ্রিল্যান্সারের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি। বাংলাদেশ সরকার ও আইসিটি মন্ত্রনালয় হতে যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের এই আইডি কার্ড প্রদান করা হয়। ফ্রিল্যান্সিং যদি আপনার পেশা হয়ে থাকে তবে এই কার্ড আপনার পেশা ও আয়ের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। তবে অনেকেই জানেন না এই আইডি কার্ড কীভাবে নিতে হয় বা আইডি কার্ডটি নিতে কী কী দরকার হয়। আজকে এই পোস্টে আপনি আইডি কার্ডটি পেতে কীভাবে আবেদন করবেন এবং কী কী দরকার হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো আমরা।


কী কী দরকার হবে?

এই কার্ড করতে কিছু শর্ত রয়েছে। আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সরকার কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এছাড়াও কিছু কাগজ বা ডকুমেন্ট আপনার দরকার হবে নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রমাণ করতে। যা যা আপনার দরকার হবেঃ


অবশ্যই আপনার এনআইডি কার্ড থাকতে হবে। এনআইডি কার্ড ছাড়া আপনি আবেদন করতে পারবেন না।

অনলাইন কাজের মাধ্যমে শেষ ১২ মাসে বা ১ বছরের মধ্যে আপনার আয়ের পরিমাণ কমপক্ষে ১০০০ ডলার হতে হবে। নাহলে আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।

বাইরের দেশ থেকে যে আপনি উপার্জন করছেন তার প্রমাণ দরকার হবে।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বা ক্লায়েন্ট হতে আপনি যে চুক্তির মাধ্যমে কাজ করছেন তার প্রমাণ দরকার হবে।

অবশ্যই বাংলাদেশের আইনে বৈধ এমন কাজ হতে হবে।

আপনার বিদেশি আয়ের উৎস এবং কাজের ধরণ প্রমাণে বেশ কিছু ডকুমেন্ট আপনি দিতে পারেন।


যেসব ডকুমেন্ট তারা অফিসিয়ালভাবে চেয়ে থাকেঃ


পেয়োনিয়ার বা এরকম যে কোন অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের স্টেটমেন্ট

আপনি যে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন সেখানকার স্টেটমেন্ট

আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট

রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট

এর সবগুলো নাও দরকার হতে পারে। তবে যেগুলো আছে সেগুলো কাছে রাখা ভালো। উপরের ডকুমেন্টগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার নাম, ১২ মাসের পূর্ণ আয়ের বিবরন, ট্রানজ্যাকশনের পূর্ণ তথ্য ইত্যাদি থাকতে হবে। এছাড়াও ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা যাচাই করতে চাইতে পারে। এগুলো ছাড়াও আবেদন করার জন্য ১৫০০ টাকার আবেদন ফি প্রযোজ্য হবে। মোবাইল ওয়ালেট অথবা কার্ড হতে এই পেমেন্ট করতে হবে আপনাকে।


যেভাবে আবেদন করবেন

সকল ডকুমেন্টের স্ক্যান কপি এবং পেমেন্ট সঙ্গে রেখে আবেদন করবার জন্য আপনাকে ফ্রিল্যান্সার ওয়েবসাইট freelancers.gov.bd এখানে যেতে হবে মোবাইল বা পিসির ব্রাউজার থেকে। এরপর নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করে আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন।


‘Apply Now’ বাটনটিতে ক্লিক করুন।






পরবর্তী পেজে একটি ফর্ম দেখতে পাবেন। আপনার পুরো নাম, ইমেইল, মোবাইল নাম্বার, পাসওয়ার্ড (২ বার) পূরণ করুন।  ‘I’m not a robot’ বক্স থেকে ক্যাপচা পূরণ করুন।






Sign Up’ বাটনে ক্লিক করুন। ‘Your account has been created. Please check your email to verify’ এরকম একটি মেসেজ দেখতে পাবেন।

আপনার প্রদত্ত ইমেইল অ্যাকাউন্টে লগিন করুন। ইনবক্সে একটি ইমেইল দেখতে পাবেন। ইনবক্সে খুঁজে না পেলে স্প্যাম বা জাঙ্ক মেইলের মধ্যে খুঁজে পাবেন।

ইমেইলের মধ্যে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে একটি লিঙ্ক পাবেন। সেই লিঙ্কে ক্লিক করুন। নতুন একটি পেজে নিয়ে যাবে আপনাকে যেখানে ‘Account verified, you may login’ এই মেসেজটি দেখতে পাবেন।

এই পেজেই আপনার দেয়া ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করে ফেলুন। 

লগিন করার পর নতুন পেজে প্রথমেই ‘Freelancer ID’  নামের অপশনটি দেখতে পাবেন। এখানে ক্লিক করে নতুন পেজে চলে যান।

নতুন পেজে ‘Apply Now’ নামের নতুন বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করুন এবং নতুন পেজে চলে যান।





এখানে ৪ টি ধাপে আপনাকে নতুন একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। কিছু তথ্য যেগুলো সাইন আপ করবার সময় দিয়েছেন তা আগেই পূরণ হয়ে থাকবে। বাকি তথ্য আপনাকে পূরণ করতে হবে নির্ভুলভাবে। প্রথম ধাপে আপনার জন্ম তারিখ, ন্যাশনাল আইডি কার্ড নাম্বার, ঠিকানা এবং লিঙ্গ পূরণ করতে হবে। মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করবার অপশন থাকবে এখানে। মোবাইল নাম্বার সেকশনে ‘Verify’ বাটনে ক্লিক করলে আপনার মোবাইলে একটি ওটিপি কোড যাবে যা এখানে আপনাকে পূরণ করে ভেরিফাই করে ফেলতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে পরবর্তী ধাপে যেতে ‘Save and Next’ বাটনে ক্লিক করুন।


দ্বিতীয় ধাপে প্রথমেই ‘Which of the following describe you the best?’ নামে একটি বক্স পাবেন। এখানে ৩ টি অপশন থাকবে। ‘Individual Freelancer’, ‘Freelance Team Owner’, ‘Freelance Team Member’ এই তিনটি অপশন বুঝে পূরণ করতে হবে আপনাকে। আপনি যদি নিজে একাই কাজ করেন তবে প্রথম অপশনটি আপনার জন্য। আপনাকে কিছু পরিবর্তন করতে হবে না। তবে আপনি যদি নিজে একটি টিম বা দল বানিয়ে কাজ করিয়ে থাকেন তবে এখানে দ্বিতীয় অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। আর আপনি যদি এমন কোন দলের সদস্য হিসেবে কাজ করেন তবে তৃতীয় অপশনটি আপনার জন্য।


‘Your Expertise’ এই অপশনে আপনি কী নিয়ে কাজ করেন সেটি লিখে দিতে পারেন। পরবর্তীতে কোন মার্কেটপ্লেসে আপনি কাজ করেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে। তবে আপনি লিস্টেড কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ না করলেও ‘Other’ সিলেক্ট করে আপনার পছন্দের মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইল লিঙ্ক দিয়ে দিতে পারেন। পরবর্তী অপশনে আপনি যদি মার্কেটপ্লেসের বাইরে থেকেও কাজ করে থাকেন তবে ইয়েস দিতে হবে। তখন নতুন কিছু অপশন আসবে এবং আপনাকে সেখানকার লিঙ্ক ও আয়ের তথ্য পূরণ করতে হবে। আপনার কাজের রেটিং ৫ এর মধ্যে কত সেটিও জানাতে হবে এখানে। সর্বশেষ অংশে আপনাকে ১২ মাসে কত আয় হয়েছে সেটি দিতে হবে। সঠিক আয়ের তথ্য এখানে পূরণ করে দিন। পরবর্তী ধাপে যেতে আবারও ‘Save and Next’ বাটনে ক্লিক করুন।


তৃতীয় ধাপে কিছু বিস্তারিত তথ্য চাইবে। প্রথমে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে অল্প কথায় কিছু লিখতে হবে। এরপর আপনার দক্ষতা বা কী কাজ আপনি করে থাকেন তার ব্যাপারে জানাতে হবে। আপনি যদি এসব দক্ষতার কোন সার্টিফিকেট নিয়ে থাকেন তবে সেটি পরের বক্সে উল্লেখ করে দেবেন। পরবর্তী অংশে আপনি কত বছর ধরে অনলাইনে কাজ করছেন সেটি জানাতে হবে। শেষ অংশে আপনি আপনার কাজের জন্য মার্কেটপ্লেসের বাইরেও রিভিউ পান কিনা সেটি জানতে চাইবে। সঠিক তথ্য দিয়ে দিন। আবারও ‘Save and Next’ বাটনে ক্লিক করুন।

চতুর্থ ও শেষ ধাপে আপনার একটি ছবি চাইবে যেটি আইডি কার্ডে থাকবে। তাই নিজের সাম্প্রতিক একটি ছবি আপলোড করে দিন এখানে। এরপর ‘Finish’ বাটনে ক্লিক করুন। ‘Pending Payment’ লেখা পরবর্তী একটি পেজ দেখতে পাবেন যেখানে আপনাকে পেমেন্ট করার জন্য নির্দেশনা ইমেইলে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হবে। এবার আপনাকে আপনার ইমেইলে যেতে হবে।

Freelancers.gov.bd নতুন একটি ইমেইল পাবেন যেখানে ১৫০০ টাকা পেমেন্ট করার জন্য লিঙ্ক পেয়ে যাবেন। এই লিঙ্কে ক্লিক করে বিকাশ, নগদ, রকেট, কার্ড ইত্যাদি মাধ্যমে পেমেন্ট করবার অপশন পেয়ে যাবেন। পেমেন্ট করে দিন।

কিছুদিনের মধ্যে আপনি নতুন একটি ইমেইল পেয়ে যাবেন যেখানে আপনার কাছে কিছু ডকুমেন্ট চাওয়া হবে প্রমাণের জন্য। উপরে বর্ণিত ডকুমেন্টগুলো হতে যেগুলো আপনার আছে সেগুলো এটাচ করে দিয়ে এই ইমেইলেই একটি রিপ্লাই আপনাকে পাঠাতে হবে। ডকুমেন্ট সব ঠিক থাকলে কিছুদিন এর মধ্যেই আপনি একটি মেইল পেয়ে যাবেন যে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আইডি দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩ সপ্তাহের মত সময় লাগতে পারে।


এবার আইডি কার্ডটি পেতে হলে আপনাকে আবারও freelancers.gov.bd সাইটে লগিন করতে হবে। এখানে আপনি ভার্চুয়াল আইডি কার্ডটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এই কার্ডটি এক বছর মেয়াদের জন্য দেয়া হবে। পরে আবার রিনিউ করতে পারবেন।

এভাবেই আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে নিতে পারেন।











Comments